স্বদেশ ডেস্ক:
নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাংসদ শামীম ওসমান নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের (নাসিক) স্বতন্ত্র মেয়রপ্রার্থী অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকারকে উদ্দেশ করে বলেছেন, আপনি আপনার মতো কাজ করেন। হাতি দিয়ে নৌকা ডুবিয়ে দেবেন, তা হবে না। হাতি নৌকায় উঠতে দেব না। নৌকায় ওঠার আগেই হাতি কাঁধে উঠিয়ে দৌড় দেব। নারায়ণগঞ্জে জামায়াত-বিএনপির অত বড় শক্তি নেই, নৌকা ডুবানোর। গতকাল সোমবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জের চাষাড়াস্থ একটি কমিউনিটি সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। শামীম ওসমান ও সেলিনা হায়াৎ আইভী- দুজনই আওয়ামী লীগের নেতা হলেও নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে পরস্পর প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী।
আগামী ১৬ জানুয়ারি নাসিক নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়রপ্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভীর পক্ষে দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা মাঠে নামলেও এতদিন নিশ্চুপ ছিলেন শামীম ওসমান। নির্বাচনে স্বতন্ত্রপ্রার্থী বিএনপি নেতা তৈমূর আলম খন্দকারকে ওসমান পরিবারের প্রার্থী চিহ্নিত করে ভোটের প্রচার চালাচ্ছেন সেলিনা হায়াৎ আইভী। শামীম ওসমানকে গডফাদার আখ্যা দিয়েছেন তিনি। বিপরীতে আইভীকে ব্যর্থ মেয়র আখ্যা দিয়ে ভোট প্রার্থনা করছেন তৈমূর আলম। এমন একটা অবস্থার মধ্যেই শামীম ওসমান সংবাদ সম্মেলন করে নৌকার প্রার্থীর পক্ষে আনুষ্ঠানিকভাবে নিজের অবস্থানের জানান দিলেন। সংবাদ সম্মেলনে মেয়র পদে নৌকার প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভীর নাম একবারও উচ্চারণ করেননি প্রভাবশালী ওসমান পরিবারের এই সদস্য, যার সাথে রয়েছে তার দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক দ্বৈরথ।
সংবাদ সম্মেলনে শামীম ওসমান বলেন, ‘গোয়েন্দাদের রিপোর্ট যারা রাজনীতিতে ওপর থেকে পড়েছেন তারা বিশ্বাস করেন আমি কাউকে ব্লেম করিনি শ্মশানের মাটির ব্যাপারে। আমি বলেছিলাম- এটা ইবলিশ শয়তানের কাজ। এটা কোনো মানুষ করতে পারে না। আমাকে একটা নারীর (আইভী) নাম বলা হয়েছিল, আমি ধমক দিয়েছিলাম। একটা প্রেসরিলিজ এসেছিল, যাতে আমার হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়েছিল। আমি শীর্ষ নেতাদের বলেছিলাম- তাকে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতে বলেন।’
শামীম ওসমান বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জে বিএনপি-জামায়াতের প্রার্থীর কারণে আমরা ঘরে থাকতে পারিনি। বিএনপি-জামায়াত আমাদের বাড়িতে আগুন দিয়েছিল। কারণ আমরা ওসমান পরিবারের সদস্য। আমাদের বাড়ি বায়তুল আমানের প্রতি কত ক্ষোভ ছিল। তারা বুলডোজার দিয়ে ভেঙে দিতে চেয়েছিল।’
শামীম ওসমান আরও বলেন, নির্বাচন এলেই আমাকে নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। নির্বাচনের সময় আমি কেন সাবজেক্ট ম্যাটার হব, জানতে চাই। এখন আমার অবস্থা গরিবের বৌয়ের মতো। ও বলে আমি তার, সে বলে আমি তার। তিনি বলেন, নির্বাচন ধমক দিয়ে হয় না। একে-অপরকে দোষারোপ করে নির্বাচন হয় না। সব রাগ-অভিমান ছেড়ে দিয়ে কাজ করতে হবে। সবার ঘরে ঘরে যেতে হবে। এই ঘাঁটি নৌকার, এ মাটি আওয়ামী লীগের। জয় আমাদের হবেই। এ সময় শামীম ওসমান গতকালের (সোমবার) সংবাদ সম্মেলনটিকে তার জীবনের সবচেয়ে কষ্টের সংবাদ সম্মেলন হিসেবে উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, গত ৭-৮ বছর ধরে একটি মহল আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করছে। আমার জীবনে আমি এত কাঁদিনি। তবে কবরস্থানের ঘটনায় আমি অনেক দুঃখ পেয়েছি। আশা করেছিলাম একটি তদন্ত কমিটি হবে, সেটি না হয়ে বরং আমার বিরুদ্ধে প্রেসরিলিজ দেওয়া হলো।
সংবাদ সম্মেলনের শেষ পর্যায় শামীম ওসমান বলেন, ১৬ তারিখ খেলা হবে এবং খেলা দেখা যাবে। সংবাদ সম্মেলন শেষে সাংবাদিকদের বেশ কিছু প্রশ্নের জবাব দেন তিনি।
এবারের সিটি নির্বাচনে আইভীকে সমর্থন দেওয়ার যে ঘোষণা আপনি দিয়েছেন, সেটি কি আসলে মন থেকে না কোনো চাপে পড়ে দিয়েছেন- সাংবাদিকদের এমন এক প্রশ্নের জবাবে একটি গল্পের উদাহারণ দিয়ে শামীম ওসমান বলেন, ভাগ্য এবং যোদ্ধার মধ্যে কথা হচ্ছে। ভাগ্য যোদ্ধাকে বলছে তুমি ঝড়ের সামনে দাঁড়াতে পারবে না। যোদ্ধা আবার ভাগ্যকে বলছে আমি নিজেই ঝড়। পরে নিজের সাথে থাকা নেতাকর্মীদের দেখিয়ে শামীম ওসমান বলেন, এই ঝড়দেরকে চাপ দেওয়ার ক্ষমতা কারও নেই। আর কারও চাপে পড়ে কোনো কিছু করি না। ভালোবাসা থেকেই করি। রাজনীতিটা মাথা দিয়ে নয়, অন্তর দিয়ে করি।
আপনাকে কেনো গডফাদার বলা হয় এবং নারায়ণগঞ্জে জামায়াত-বিএনপি নয়, আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী কেনো আপনাকে অপবাদ দেয়- আরেক সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে শামীম ওসমান বলেন, যারা এ ধরনের মন্তব্য করে তাদের কাছেই জিজ্ঞাসাটা করা উচিত। কারও যদি ইচ্ছে হয় আমাকে গডফাদার বলতে বলবেন। দুদিন আগেও আমাকে একজন (আইভী) বড়ভাই বলেছেন। এখন কারও যদি মনে হয় আজকে তোমাকে ব্রাদার বলব, কালকে তোমাকে ফাদার বলব, পরশু তোমাকে গডফাদার বলব- বলতে পারে। আমি কারও এসব বলাকে কেয়ার করি না। এই বলাবলিতে আমার কিচ্ছু যায়আসে না। আমি প্রমাণিত, গালি খেতে খেতে এপর্যন্ত এসেছি। আমাদের প্রধানমন্ত্রী একজন নীলকণ্ঠি। উনি যদি এতো বিষ খেয়ে নীলকণ্ঠি হতে পারেন, তবে আমরাও একটু নীলকণ্ঠ হলাম।
স্বতন্ত্র মেয়রপ্রার্থী তৈমূর আলম শামীম ওসমানের প্রার্থী, আড়াল থেকে তাকে তিনি সাপোর্ট দিচ্ছেন। শামীম ওসমানের ভাই জাতীয় পার্টির সাংসদ এবং জাতীয় পার্টির নেতারাও তাকে (তৈমূর) সমর্থন দিচ্ছেন- ডা. সেলিনা হায়াত আইভীর করা এই মন্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে শামীম ওসমান বলেন, উনি (আইভী) কী বলছেন সেটি তার ব্যাপার। নির্বাচন করতে গেলে মাথা একটু এলোমেলো থাকে। ঢাকা থেকে জাতীয় পর্যায়ের ত্যাগী সব নেতা এসেছেন এই নির্বাচন পরিচালনা করার জন্য। তারা বলছেন এই নির্বাচন একটা কৌশল বিএনপি-জামায়াতের। আমি কার কথাকে সঠিক বলব? তারটা (আইভী) নাকি কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দেরটা? তবে এটুকু বলব, তিনি সঠিক বলছেন না। এই কথা তার নির্বাচনে প্রভাব পড়বে।
এ সময় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত শহিদ বাদল, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি চন্দন শীল, সেক্রেটারি খোকন সাহা, শহর যুবলীগের সভাপতি শাহাদাৎ হোসেন সাজনু, নারায়ণগঞ্জ জেলা দায়রা জজ আদালতের সাবেক পাবলিক প্রসিকিউটর ওয়াজেদ আলী খোকন, জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি হাসান ফেরদাউস জুয়েল, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মোহসিন মিয়া, ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম সাইফউল্লাহ বাদল, সেক্রেটারি শওকত আলী, নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের সভাপতি মানু, এনায়েতনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান, বিলুপ্ত মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি হাবিবুর রহমান রিয়াদ, মদনপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এম এ গাজী সালাম, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবর রহমান, সাধারণ সম্পাদক ইয়াছিন মিয়া প্রমুখ।